মইনুল সাহেব, পদার্থ বিজ্ঞানের প্রফেসর। দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে তিনি একটি স্বনামধন্য ইউনিভার্সিটি তে পড়াচ্ছেন। এমনিতে তিনি খুবই অমায়িক কিন্তু ভেতরে তিনি খুব জটিল প্রকৃতির মানুষ। তিনি কল্পনা বিলাসী। তার ধারনা মানুষ ইচ্ছে করলেই ভিন গ্রহের প্রানীদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। এই বিষয়টি নিয়ে তিনি অনেক দিন ধরে গবেষনা চালাচ্ছেন। মইনুল সাহেব তার পরিবারের সাথে থাকেন না, কোন এক অজ্ঞাত কারনে তিনি একা থাকতে পছন্দ করেন। পল্টনের একটি পুরনো বাড়িতে তিনি একা থাকেন।
আজ সকালে কোন ক্লাস ছিল না বলে তিনি দেরি করে ঘুম থেকে উঠলেন। দুপুরের ক্লাস নিতে যাওয়ার জন্য তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। শাওয়ারের নিচে দারিয়ে গোসল করার সময় তার হঠাত মনে হল কেউ তাকে প্রত্যক্ষ করছে। তিনি পাত্তা দিলেন না, এগুলো মনের ভুল, মাঝে মাঝেই তার এমন হয়।
ক্লাস এ পড়ানো শেষ করে ফিরতে ফিরতে তার সন্ধ্যা হয়ে গেল। বাসায় এসে তার মনে পরলো আজ বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর টেস্ট ম্যাচ রয়েছে। আগের ম্যাচটিতে বাংলাদেশ জিতেছে, আজ জিতলে প্রথমবারের মত টেস্ট সিরিজ বিজয় হবে। তিনি আরাম করে খেলা দেখতে বসলেন। খেলা দেখার মাঝে তিনি রাতের খাবার টাও সেরে নিলেন। যেহেতু তিনি একা থাকেন তাই প্রতিদিন রান্না করার ঝামেলায় তিনি যান না। বাইরে থেকে তিনি খাবার কিনে এনেছেন আজকে।
রাত প্রায় তিন টা… মইনুল সাহেবের খুব ঘুম পাচ্ছে। তিনি ঠিক করলেন ঘুমিয়ে যাবেন কারন গত কয়েকদিন যাবত তার ভাল ঘুম হচ্ছে না, দুঃস্বপ্ন দেখছেন। তিনি টিভি এবং লাইট বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরলেন।
ঘুমের মধ্যে মইনুল সাহেব টিভি থেকে ধারাভাষ্যকারের কথা শুনতে পেলেন। টিভি চলছে, মইনুল সাহেব মন ভোলা মানুষ নন, তার এরকম হবার কথা নয়। যাই হোক তিনি বিছানা থেকে উঠে দেখলেন সত্যি সত্যি টিভি চলছে। তিনি টিভি বন্ধ করলেন, কোন এক অজ্ঞাত কারনে তিনি টিভির প্লাগ টিও টেনে খুলে রাখলেন। বিছানায় শুলেন কিন্তু এখন এত সহজে আর ঘুম আসবে না, তিনি চেস্টা করতে থাকলে ঘুমনোর। অনেক চিন্তা ভাবনা এখন তার মাথায় আসছে। তার মনে হল আমাদের সাথে কি অদৃশ্য কোন জীব কি বসবাস করে ? যাদের কে আমরা দেখতে পাই না কিন্তু তারা ঠিকই দেখতে পারে ? এমন তো হওয়া সম্ভব কারন আমরা বাস করি ত্রিমাতৃক জগতে এর পরবর্তি মাত্রা অর্থাত চতুর্থ মাত্রা থেকে আমাদের দেখা সম্ভব। আমরা যেমন এক মাত্রা অথবা দুই মাত্রার জিনিস দেখতে পারি তেমনি চতুর্থ মাত্রার প্রানীরা আমাদের কে দেখতে পারবে এটাই সাভাবিক। তিনি ভাবতে থাকলেন অনেকে ভুত বলে যেই জিনিস টিকে বিশ্বাস করে কিন্তু কখনও দেখতে পারে না সেটি ৪ মাত্রার কোন প্রানী হতে পারে। তিনি জ্বীন এ বিশ্বাস করেন কারন তিনি মুসলিম, কিন্তু তিনি দেখতে পান না কারন হতে পারে জ্বীন চতুর্থ মাত্রার জীব। তিনি চিন্তা করতে থাকলেন এগুলো নিয়ে…. এক সময় তিনি ঘুমিয়ে পরলেন।
হঠৎ করে দুঃস্বপ্ন দেখে তিনি ধরমড় করে উঠে বসলেন। দরদর করে তিনি ঘামছেন। ঘড়ি দেখলেন রাত তিন টা বাজে। তিনি ঘুমতে গিয়েছেন মাত্র পাঁচ মিনিট আগে। স্বপ্নে যা দেখেছেন সেটা তিনি মনে করতে চান না। ফ্রীজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে খেলেন। টিভির দিকে তাকিয়ে তিনি আশ্চর্য হলেন, টিভি বন্ধ, প্লাগ টেনে খুলে রাখা। তিনি বুঝতে পারলেন না কি হয়েছিল আর কি হচ্ছে। সারা রাত তার আর ঘুম হল না, শেষ রাতের দিকে তার হালকা ঘুম হল।
সকাল বেলা নাস্তার টেবিলে বসে তিনি গত রাতের কথা চিন্তা করলেন। আসলে কি আমাদের স্বপ্নটাই চতুর্থ মাত্রা? যেটা আমরা কোন না কোন ভাবে দেখতে পারি কিন্তু ধরতে পারি না!